কোষ কাকে বলে ? সকল সজীব ক্রিয়া-কলাপের একক এবং কোনরূপ মাধ্যম ছাড়াই যে নিজের প্রতিকৃতি তৈরি করতে পারে তাকে বলা হয় কোষ।
মূলত এই আর্টিকেলে কোষ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত ভাবে আরও অনেক কিছু জানবো । তার পাশাপাশি কোষের কাজ, কোষের গঠন, কোষের প্রকারভেদ এবং উদ্ভিদকোষ ও প্রাণীকোষ মধ্যে পার্থক্যসমূহ জানার চেষ্টা করব।
তার আগে চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক
পোস্টের বিষয়বস্তু
কোষ কাকে বলে
১৯৬৯ সালে লোই এবং সিকেভিজ নামক দুইজন বিজ্ঞানী সর্বপ্রথমবারের মতো কোষ আবিষ্কার করেন এবং কোষের সংজ্ঞা প্রদান করেন।
এই সংজ্ঞা মতে, কোষ হলো জীবের দেহ গঠনের একক এবং তারা কোন ধরনের মাধ্যম ছাড়াই সকল জীবজ ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা করতে পারে। এগুলো মূলত আকারে খুবই ক্ষুদ্র এবং বেশ কয়েক ধরনের উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত হয় ।
কোষের বেশ কয়েক ধরনের কোষ উপাদান থাকে যেগুলো আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব ।
এতক্ষণে আমরা জানলাম কোষ কাকে বলে, এবার আমরা জানবো কোষের প্রকারভেদ।
কোষের প্রকার
১) উদ্ভিদ কোষ কাকে বলে
সজীব উদ্ভিদ যে কোষ দ্বারা গঠিত হয় তাকে উদ্ভিদকোষ বলা হয়। উদ্ভিদ কোষের গঠন তুলনামূলক জটিল এবং প্রাণী কোষের সাথে এই কোষের বেশ কিছু বৈসাদৃশ্য রয়েছে ।
মূলত কোষের এই ধরনের বৈসাদৃশ্য গুলো খেয়াল রেখেই কোষের প্রকারভেদ সম্পন্ন হয় ।
২) প্রাণী কোষ কাকে বলে
জীবিত প্রাণীর দেহ যে কোষ দ্বারা গঠিত হয় তাকে প্রাণীকোষ বলা হয় । প্রাণী কোষের গঠনও বেশী জটিল । সাধারণত এই ধরনের কোষ দ্বারা গঠিত কোন জীবকে অ্যানিমেলিয়া রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই কোষ দ্বারা গঠিত টিস্যুতন্ত্রের গঠন বেশ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।
মূলত প্রাণীকোষ ও উদ্ভিদকোষ কাকে বলা হয় এগুলো তাদের কোষে উপস্থিত উপাদানসমূহের ভিত্তিতে ভাগ করা হয়ে থাকে। এছাড়াও থাকে কিছু গঠনগত ভিন্নতা।
ব্যাপন কাকে বলে | ব্যাপন ও অভিস্রবণ এর মধ্যে পার্থক্য
উদ্ভিদ কোষ ও প্রাণী কোষের মধ্যে পার্থক্য:
উদ্ভিদ কৌশল প্রাণী কোষের মধ্যে পার্থক্য নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
- উদ্ভিদকোষ আকারে তুলনামূলক অনেক বড় হলেও প্রাণী কোষ সেই অনুপাতের ছোট হয় ।
- উদ্ভিদ কোষের প্রাচীর বিভিন্ন ধরনের জড় বস্তু দ্বারা গঠিত। বলে রাখা ভালো কোষ প্রাচীর উদ্ভিদ কোষের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। তবে প্রাণী কোষে কোন ধরনের কোষ প্রাচীর থাকে না, যদি থেকেও থাকে তবে তা নিম্নবর্গ প্রাণীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
- উদ্ভিদ দেহে কোষগহবর লক্ষ্য করা যায় তবে প্রাণীদেহে কোন ধরনের কোষগহ্বর লক্ষ্য করা যায় না। তবে যদি প্রাণীদেহে কোষগোহবর দু একটা থেকেও থাকে তবে তা আকৃতিতে বেশ ছোট । এবং অত্যাধুনিক মাইক্রোস্কোপ যন্ত্র ছাড়া তা দেখা সম্ভব নয় । এ সকল কোষগহবরের মধ্যে মূলত বিভিন্ন ধরনের জৈব এসিড,লবণপানি,ক্ষার সংরক্ষিত থাকে এবং উদ্ভিদ পরবর্তীতে তার চাহিদা মোতাবেক ব্যবহার করে।
- প্রাণীদেহে গলজি বস্তু থাকলে উদ্ভিদ দেহে গলজি বস্তু থাকে না। গলজি বস্তু মূলত সেই উপাদান যেটিতে কোষের বিভিন্ন অংশের পানি নিঃসরণের কাজ ঘটে থাকে। এছাড়াও অনেক সময় গলজি বস্তু প্রোটিন সংশ্লেষণের কাজ করে। অনেক বিপাকিয় কার্যক্রমের সাথেও জড়িত থাকে গলজি বস্তু ।
পার্থক্য
- প্রাণীকোষে নিউক্লিয়াস একদম কেন্দ্রে অবস্থান করলেও উদ্ভিদকোষে নিউক্লিয়াসের অবস্থানটি কষগহবরের আশপাশে কোথাও হয়ে থাকে। উদ্ভিদ কোষের নিউক্লিয়াস প্রাণী কোষের চেয়ে তুলনামূলক আকারে বড় হয় ।
- প্রাণীকোষে লাইসোজোম নামের একটি কোষ উপাদান রয়েছে যা উদ্ভিদ কোষে অনুপস্থিত। এই লাইসোজোম মূলত প্রাণী কোষ কে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে থাকে । লাইসোজোমকে মূলত একটি শক্তিশালী পর্দা দ্বারা আবৃত রাখা হয় যাতে এর ভেতরকার রোগ জীবাণু হজমকারি তরল বাইরে বের হয়ে আসতো না পারে। শরীরে যদি কোন কারনে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়ে থাকে তাহলে এই পর্দা গুলো ফেটে যায়। এবং ধীরে ধীরে কোষ রোগ জীবাণুর দখলে চলে যায়। এক পর্যায়ে কোষের মৃত্যু ঘটে ।
- তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হল প্লাস্টিড। প্লাস্টিড হলো এমন এক ধরনের কোষ অঙ্গানু যা কেবলমাত্র উদ্ভিদকোষে পাওয়া যায়। এটির মাধ্যমে মূলত উদ্ভিদ তার খাদ্য তৈরি করতে পারে । এছাড়াও খাদ্য সংরক্ষণ, এবং উদ্ভিদ দেহকে বর্ণময় করতে কাজ করে প্লাস্টিড।
আমরা কোষ কাকে বলে তা জেনেছি । প্রাণী কোষের এবং উদ্ভিদ কোষের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে জেনেছি । এবার আমরা যাতে চলেছি কোষের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান মাইটোকনড্রিয়া সম্পর্কে যেটিকে কোষের শক্তি ঘর বলা হয়ে থাকে ।
আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয় ছিল কোষ কাকে বলে এবং এ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যাদি। আর্টিকেলের মাধ্যমে পাঠক কিঞ্চিত উপকৃত হলে সেটি আমাদের অনেক বড় সার্থকতা।