বাংলা ছড়া সাহিত্যের অমর সৃষ্টি কাজলা দিদি কবিতা ছোটদের মনে আনন্দ, কৌতূহল এবং কল্পনার রঙ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর রচিত এই চিরস্মরণীয় কবিতা বাংলা শিশুসাহিত্যের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অবদান।
কাজলা দিদি কবিতা গল্পধর্মী বর্ণনা, মজার চরিত্র এবং সরল ভাষার মাধ্যমে শিশুদের কল্পনার জগতে প্রবেশ করায়। কবিতার প্রতিটি লাইনে ছড়িয়ে আছে আনন্দ, নির্ভেজাল হাসি এবং শৈশবের নির্মল অনুভূতি, যা আজও পাঠকের মনে দাগ কেটে যায়।
কাজলা দিদি কবিতা
– যতীন্দ্র মোহন বাগচী
বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই
মাগো, আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে, নেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাই জ্বলে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই,
মাগো, আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?
সেদিন হতে দিদিকে আর কেনই-বা না ডাকো,
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন দিদি বলে ডাকি, তখন
ও-ঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো,
আমি ডাকি, – তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
বল মা, দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে!
দিদির মতন ফাঁকি দিয়ে আমিও যদি লুকোই গিয়ে-
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে?
আমিও নাই দিদিও নাই কেমন মজা হবে!
ভূঁইচাঁপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল;
ডালিম গাছের ডালের ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
দিস না তারে উড়িয়ে মা গো ছিঁড়তে গিয়ে ফল;
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবি কি মা বল|
বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই
এমন সময়, মাগো, আমার কাজলা দিদি কই?
বেড়ার ধারে, পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোঁপে-ঝাড়ে;
নেবুর গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতো জেগে রই;
রাত হলো যে, মাগো, আমার কাজলা দিদি কই?
বাংলা সাহিত্যে কাজলা দিদির মতো চরিত্র শিশুদের কাছে অনুপ্রেরণার প্রতীক, যে সাহস, বুদ্ধিমত্তা এবং মানবিকতার প্রতি বিশ্বাস জাগিয়ে তোলে। ফলে বলা যায়, কাজলা দিদি কবিতা বাংলা ছড়া সাহিত্যের এক চিরকালীন রত্ন, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শিশুদের মুগ্ধ করে চলেছে।