জলবায়ু পরিবর্তন হলো পৃথিবীর দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়া বা বায়ুমণ্ডলের গড় অবস্থা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। এটি কেবল একটি দিনের বা বছরের আবহাওয়া পরিবর্তন নয়, বরং দশক বা শতাব্দীর সময় ধরে তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বাতাসের গতি, বরফ ও সমুদ্রের উচ্চতা ইত্যাদির ধারা পরিবর্তনকে বোঝায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ
জলবায়ু পরিবর্তন মূলত মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক কারণে হয়, তবে বর্তমান বৈশ্বিক উত্তাপের প্রধান কারণ হলো মানবসৃষ্ট কার্যকলাপ। মূল কারণগুলো হলো:
- গ্রিনহাউস গ্যাসের বৃদ্ধি – দাহ্য জ্বালানি যেমন তেল, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানোর ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂), মিথেন (CH₄) এবং নাইট্রাস অক্সাইড (N₂O) নির্গত হয়। এগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে তাপ ধরে রাখে, ফলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং হয়।
- বন ধ্বংস (Deforestation)– বন কেটে ফেলা হলে গাছ CO₂ শোষণ করতে পারে না, ফলে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায়।
- শিল্পায়ন ও যানবাহন– বড় শহরে যানবাহন, ফ্যাক্টরি, এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দাহ্য জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। এতে বায়ু দূষণ ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
- কৃষি ও পশুপালন– চারণভূমি বৃদ্ধি ও গবাদিপশুর মিথেন নির্গমন জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে।
- প্রাকৃতিক কারণ– সূর্যের ক্রিয়াশীলতা পরিবর্তন । ভলক্যানিক (জ্বালানির) বিস্ফোরণ । সমুদ্রধারার পরিবর্তন
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকার
জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা সম্ভব যদি আমরা নীচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করি:
- নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার
- সৌর, বায়ু, জলবিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধি।
- তেল ও কয়লা কম ব্যবহার।
- বনায়ন ও গাছ লাগানো
- শহর ও গ্রামে বৃক্ষরোপণ বৃদ্ধি।
- বন ধ্বংস রোধ।
- দায়িত্বশীল যানবাহন ব্যবহার
- সাইকেল, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহার।
- অপ্রয়োজনীয় যানবাহন কমানো।
- দায়িত্বশীল কৃষি ও খাদ্যাভ্যাস
- গবাদিপশু উৎপাদন সীমিত করা।
- জৈব কৃষি ও কম রাসায়নিক সার ব্যবহার।
- দূষণ ও বর্জ্য কমানো
- প্লাস্টিক কম ব্যবহার, পুনর্ব্যবহার করা।
- শিল্প কলকারখানা থেকে দূষণ কমানো।
- জনসচেতনতা ও নীতি প্রণয়ন
- মানুষকে পরিবেশ সচেতন করা।
- সরকারী নিয়ম ও আন্তর্জাতিক চুক্তি (যেমন প্যারিস চুক্তি) মেনে চলা।
উপসংহার:
জলবায়ু পরিবর্তন একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা, যার কারণ মূলত মানবসৃষ্ট। আমাদের প্রতিকারের প্রচেষ্টা এখনই শুরু করতে হবে, নাহলে আগামী প্রজন্মের জন্য বিপজ্জনক পরিবেশ সৃষ্টি হবে।