প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায় এবং অনেক মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। তাই ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ সময়মতো সঠিক লক্ষণ চিহ্নিত করতে পারলে চিকিৎসা নেওয়া সহজ হয় এবং জটিলতা এড়ানো যায়।
এই আর্টিকেলে আমরা ডেঙ্গু রোগের প্রাথমিক ও গুরুতর লক্ষণ, প্রতিরোধের উপায় এবং সঠিক যত্ন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ জানা মানেই সুস্থতার দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
ডেঙ্গু রোগ একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা Aedes প্রজাতির মশার কামড়ে ছড়ায় (বিশেষ করে Aedes aegypti)। এটি সাধারণত বর্ষাকালে বেশি দেখা যায়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ (Mild Dengue):
১. উচ্চ জ্বর (৪০°C বা ১০৪°F পর্যন্ত)
২. তীব্র মাথাব্যথা
৩. চোখের পেছনে ব্যথা
৪. পেশি ও জয়েন্টে ব্যথা (একেই “breakbone fever” বলা হয়)
৫. বমি বমি ভাব ও বমি
৬. শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ (সাধারণত ৩–৪ দিন পর দেখা দেয়)
৭. হালকা রক্তপাত (যেমন মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, নাক থেকে রক্ত পড়া ইত্যাদি)
গুরুতর ডেঙ্গুর লক্ষণ (Severe Dengue / Dengue Hemorrhagic Fever):
এই অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। লক্ষণগুলো হলো—
১. অত্যধিক পেটব্যথা বা পেট ফোলা
২. নিয়মিত বমি
৩. রক্তপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি (মাড়ি, নাক, বমি বা মলে রক্ত)
৪. শ্বাসকষ্ট
৫. অত্যধিক ক্লান্তি বা অচেতনতা
৬. ঠান্ডা হাত-পা, ঘাম, রক্তচাপ কমে যাওয়া
৭. চামড়ার নিচে বা শরীরে কালো দাগ (internal bleeding)
ডেঙ্গু রোগের কারণ
-
ডেঙ্গু ভাইরাস (Dengue Virus) — এটি Flavivirus গোত্রের ভাইরাস।
-
ভাইরাসটির চারটি ধরন (Serotype) আছে — DENV-1, DENV-2, DENV-3 ও DENV-4।
-
সংক্রমণ ঘটে এডিস মশার কামড়ে, বিশেষ করে সকালে ও বিকেলে (দিবাকালীন সময়ে)।
-
সংক্রমিত ব্যক্তি যদি মশার কামড়ে আক্রান্ত হন, সেই মশাটি আবার অন্য কাউকে কামড়ালে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতিকার ও চিকিৎসা
বর্তমানে ডেঙ্গুর নির্দিষ্ট ওষুধ বা অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই, তবে নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব —
১. সাধারণ চিকিৎসা
-
বিশ্রাম: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
-
পর্যাপ্ত তরল পানীয়: যেমন পানি, ওরস্যালাইন, ফলের রস, স্যুপ ইত্যাদি।
-
জ্বর নিয়ন্ত্রণে: প্যারাসিটামল (Paracetamol) খাওয়া যেতে পারে; তবে এসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন নিষিদ্ধ, কারণ এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
-
রক্ত পরীক্ষা: যদি জ্বর ২–৩ দিনেও না কমে, তবে রক্ত পরীক্ষা (CBC বা Dengue NS1 test) জরুরি।
২. গুরুতর ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে (Dengue Hemorrhagic Fever)
-
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন।
-
শিরায় (IV) স্যালাইন দেওয়া হয়।
-
রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে রক্ত বা প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন লাগতে পারে।
-
চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
-
এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করুন — ফুলের টব, টায়ার, ডাবের খোসা, ফ্রিজের পানি ট্রে ইত্যাদি পরিষ্কার রাখুন।
-
ঘরের ভেতর ও বাইরে মশা প্রতিরোধ করুন — মশারি, কয়েল, স্প্রে বা ইলেকট্রিক র্যাকেট ব্যবহার করুন।
-
পুরো হাত-পা ঢাকা পোশাক পরুন।
-
সকালে ও বিকেলে সতর্ক থাকুন — এই সময়েই এডিস মশা সবচেয়ে সক্রিয় থাকে।
-
ডেঙ্গু আক্রান্ত এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধি করুন।