আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি যারা তাহাজ্জুদ নামাজ কিভাবে পড়তে হয় জানিনা। তাই আজকে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, নিয়ত, ফজিলত, সময় ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত লিখার চেষ্টা থাকবে আমাদের এই আলোচনায়। তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা সাধারণত দুই। এটি নফল নামাজের একটি ধরণ। এই নামাজের রুকু, সজদা এবং তশহুদ পর্যন্ত সাধারণত সমস্ত নামায এর মতই।
পোস্টের বিষয়বস্তু
তাহাজ্জুদ নামাজ কি
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানার আগে আমাদের জানতে হবে তাহাজ্জুদ নামাজটা আসলে কি। এটা কি অন্যান্য নামাজের মতই নাকি আলাদা। তাহাজ্জুদ নামাজ আসলে একটি নফল নামায যা রাতের অন্তর্ভুক্ত সময় পড়া হয়। এটি সাধারণত ইশার নামায়ের পরে ভোর হওয়ার আগের সময়। নামাজের সময়টি আরবি ক্যালেন্ডারের নির্ধারিত রাতের অন্তর্ভুক্ত সময় হল মীম নাইট।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
এটি রাতের শেষ পর্যন্ত পড়া যায়। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সাধারন নামাজের মতই।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত দুই রাকাত করে আদায় করতেন। তিনি কখনো ৪ রাকাত, কখনো ৮ রাকাত এবং কখনো ১২ রাকাত পড়েছিলেন। কিন্তু কেউ যদি এই নিয়ম এ বা ২ রাকাত আদায় করেন, তাহলেও তার তাহাজ্জুদ আদায় হবে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।”
যে কোনো সুরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে আদায় করা উত্তম। কেরাত উঁচু বা নিচু উভয় আওয়াজে পড়া জায়েজ আছে। তবে কারও কষ্টের কারণ হলে চুপিচুপি পড়া কর্তব্য।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সমূহ:
- প্রথমে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাঁধতে হবে।
- এরপর ছানা পড়তে হবে।
- এরপর সুরা ফাতেহা পড়তে হবে।
- এরপর সুরা যেকোনো পড়া। তথা কেরাত পড়া।
- অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সেজদা আদায় করতে হবে।
- এভাবেই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করতে হবে।
এভাবে দুই দুই রাকাআত করে ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম। (বিঃদ্রঃ– যদি এশার নামায পরে বিতরের নামায পড়ে থাকেন, তবে তাহাজ্জুত নামায পড়ার পড়ে বিতর নামায পড়ার দরকার নেই। তখন ২ রাকাত থেকে শুরু করে ৮রাকাত
আরো জানুন;- শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত
মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া পুরুষ ও মহিলা দুজনেই করতে পারে। তবে মহিলাদের নিজেদের সামনের সমস্যার জন্য এর নিয়ম কিছুটা পুরুষের তুলনায় ভিন্ন হতে পারে। মহিলারা নামাজের সময় পরদা পরিধান করে রাখতে হবে। এছাড়া মহিলাদের জন্য নিচে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম দেওয়া হলোঃ
১। নামাজ শুরু করার আগে ও নিয়ত করার সময় মহিলারা নামাজ সম্পূর্ণ করতে পারে তবে দুটি পাদ নামাজ একসাথে না পড়তে হবে।
২। পরে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।
৩। তারপরে সূরা আল-মুজাদিলা পড়তে হবে।
৪। পরে তাহাজ্জুদ নামাজের দুরুদ শরীফ পড়তে হবে।
৫। মহিলাদের জন্য নামাজ শেষে তাসবীহ পড়া প্রস্তাবিত নয়।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার আগে সম্মান এবং ভাবগুলো মনে রাখতে হবে যেন প্রতিটি নামায় সঠিক নিয়ম এ আদায় করা যায়। আপনি নিচের নিয়তটি পাঠ করতে পারেন:
আরবি নিয়ত: نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ – اَللهُ اَكْبَر
অর্থ : দুই রাকাআত তাহাজ্জুদের নিয়ত করছি.. অতঃপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বেঁধে নামাজ পড়া।
তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত
বাংলা নিয়ত: “নাওয়াযে সল্লা্তুল তাহাজ্জুদি সুন্নাহ আদায় করছি আল্লাহর জন্য যার মাধ্যমে আমি জান্নাতের পথে আগাম করতে চাই।”
আপনি যদি এই নিয়ত না জানেন তবে আপনি শুধুমাত্র মনে রাখতে পারেন যে আপনি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ছেন আল্লাহর জন্য।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করা হলে নিম্নলিখিত উপযুক্ত ফরমুলা ব্যবহার করা হয়:
“أُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ التَّهَجُّدِ سُنَّةً لِلَّهِ تَعَالَى”
উচ্চারণঃ উসলিযা রাকাঅতাইনি তাহাজ্জুদি সুন্নতালিল্লাহি তাআলা।
অর্থঃ আমি আল্লাহর জন্য তাহাজ্জুদ নামাজের দুটি রাকাত সুন্নত পাঠ করছি।
এটি নামাজের প্রথম রাকাতে পড়া হয়। নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে আপনার ইচ্ছে মত সূরা পাঠ করতে পারেন। তবে আমরা সাধারণত সূরা আল-ইখলাস বা সূরা আল-কাফিরুনি পাঠ করি।
শেষ কথা:
কোরআন মাজিদে উল্লেখিত নফল।
সুন্নত নামাজ গুলোর মধ্যে তাহাজ্জুদের নামাজ একটি। তাহাজ্জুদের নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। আল্লাহ পাক আমাদের সেই তৌফিক দান করুক। আমিন।