স্থিতি, আবর্ত ও প্রবাহী ঘর্ষণ কাকে বলে ?

ঘর্ষণ কাকে বলে

ঘর্ষণ (Friction) হলো দুটি পৃষ্ঠের মধ্যে আপেক্ষিক গতি বা গতি শুরু হওয়ার প্রবণতার বিরুদ্ধে কাজ করা একটি বল। এটি সবসময় সেই দিকের বিপরীত দিকে কাজ করে যেদিকে বস্তুর আপেক্ষিক গতি ঘটে বা ঘটতে চায়।

স্থিতি ঘর্ষণ কাকে বলে

স্থিতিঘর্ষণ (Static friction): বল প্রয়োগ দ্বারা টানা সত্বেও যখন।
কোনাে বস্ব কোনো তলের ওপর স্থির হয়ে থাকে, তখন যে ঘর্ষণ বল
ক্রিয়া করে, তাকে বলে স্থিতিঘর্ষণ।
উদাহরণ : টেবিলের ওপর রাখা একটি বাক্সকে স্প্রিং তুলার সাহায্যে 98 নিউটন বল দিয়ে ডানদিকে টানা হল। বাক্সটি যদি স্থির থাকে, তবে এক্ষেত্রে স্থির অবস্থার ঘর্ষণ বল কাজ করবে, যার মান 9৪ নিউটন এবং অভিমুখ বামদিকে।

গতি ঘর্ষণ কাকে বলে

গতীয়ঘর্ষণ (SIiding friction) : বল প্রয়োগ করে টানার কারণে
যখন কোনা বস্তু চলতে থাকে, তখন যে ঘর্ষণ বল ক্রিয়া করে, তাকে
বলে গতিশীল অবস্থার ঘর্ষণ বা গতীয়ঘর্ষণ।

উদাহরণ : টেবিলের ওপর রাখা একটি বাক্সকে স্প্রিং তুলার সাহায্যে 9,8 নিউটন বল দিয়ে ডানদিকে টানা হল। এই বলের প্রভাবে বাক্সটি যদি চলতে শুরু করে, তবে গতিশীল অবস্থার ঘর্ষণ
বল কাজ করবে , যার অভিমুখ বামদিকে। [ এই ক্ষেত্রে গতিশীল
অবস্থার ঘর্ষণ বলের মান 9৪ নিউটনের সমান নয়। এই বলের, মান
শুধুমাত্র স্প্রিং তুলার সাহায্যে মাপা সম্ভব নয়।

আবর্ত ঘর্ষণ কাকে বলে

আবর্তঘর্ষণ (Rolling Friction): যখন কোন বস্তু অপর কোন
তলের উপর দিয়ে গড়িয়ে চলে, তখন যে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয় তাকে
আবর্তঘর্ষণ বলে।

উদাহরণ- ফুটবল, মারবেল গুটি, লন-রোলার ইত্যাদি মাটির উপর
দিয়ে চলার সময় এই ধরনের ঘর্ষণ সৃষ্টি হয়।

প্রবাহী ঘর্ষণ কাকে বলে

যদি কোন তরল বা বায়বীয় পদার্থের গতিপথে একটি স্থির বস্তু থাকে
কিংবা কোন গতিশীল বস্তু তরল বা বায়বীয় পদাথের ভেতর দিয়ে
যেতে চায় তখন যে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয়, তাকে প্রবাহীঘর্ষণ বলে।

উদাহরণ-স্থির তলের উপর দিয়ে তরল বা বায়বীয় পদার্থ প্রবাহিত
হবার সময়, নদীতে নীকা চলার সময় পানি ও নৌকার মধ্যে এক ধরনের ঘর্ষণের সৃষ্টি হয়।

ঘর্ষণ বল কেন উৎপন্ন হয়?

পরস্পরের সংস্পর্শে থাকা দুটি তলের মধ্যে আপেক্ষিক গতি সৃষ্টি
হলে বা সৃষ্টির চেষ্ট করা হলে গতি বা গতি উৎপাদনের চেষ্টার
বিরুদ্ধে ঘর্ষণ বল ক্রিয়া করে। তখন সংস্পর্শ তলের সমান্তরালে
বস্তুর গতির বিপরীত দিকে ঘরষণ বল উদ্ভব হয়।

আরো পড়ুন ;- কারক কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

ঘর্ষণ বলের সুবিধা এবং অসুবিধা

সুবিধা:-

  • ঘর্ষণের জন্য আমরা কোন বস্তুকে হাতে ধরে রাখতে পারি। ঘর্ষণ না থাকলে বস্তুটি হাত থেকে পিছলে পড়ে যেত।
  • ঘর্ষণ আছে বলে আমরা হাটতে পারি,রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে পারে।

অসুবিধা:-

  • ঘর্ষণ গতির বিরুদ্ধে কাজ করে বলে ঘর্ষণ কে অতিক্রম করে গতি সৃষ্টি করতে হলে কাজ করতে হয়। ফলে আমাদের কষ্ট হয়।
  • যন্ত্রপাতির বিভিন্ন অংশগুলির মধ্যে ঘর্ষণ বল ক্রিয়া করে অংশগুলোকে ক্ষয় করে। ফলে যন্ত্রপাতি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় ।

স্থিতঘর্ষণ ও গতিশীल অবস্থার ঘর্ষণের মধ্যে কোনটির মান সর্বদা বেশি হয় এবং কন?

একই শর্তে দুটি নির্দিষ্ট তলের ক্ষেত্রে স্থির অবস্থার ঘর্ষণ ও গতিশীল অবস্থার ঘর্ষণের মধ্যে স্থির অবস্থার ঘর্ষণ বলের মান সর্বদা বেশি হয়। কারণ— গতিশীল অবস্থায় তল দুটির মধ্যে ঘর্ষণবল কম হয়। একারণেই একটি স্থির গাড়িকে ঠেলে গতিশীল করতে যতটা বল প্রয়োগ করতে হয়, গাড়িটি গতিশীল হয়ে গেলে আর ততটা বল প্রয়োগ করতে হয় না।

ঘর্ষণ বলের সূত্র

সূত্রানুযায়ী, মান হল μ ∗ N \mu * N μ∗N । এখানে μ, গ্রীক অক্ষর মিউ (উচ্চারণ “মিউ”),ঘর্ষণ গুণাঙ্ক এর জন্য ব্যবহৃত। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *