বাক্য বাংলা ব্যাকরণ এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচিত বিষয় । তবে আমরা অনেকেই জানিনা যে বাক্য কাকে বলে । কতোগুলো পদ সুবিন্যস্ত হয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করলে তাকে বাক্য বলে। আমরা যারা মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী রয়েছে তারা যদি দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে আসা বাক্যের সংজ্ঞা দিতে যাই তবে তা মোটেও গ্রহণযোগ্য হবে না ।
বাক্যের মূলত একটি সুনির্দিষ্ট সংখ্যা রয়েছে যেটি বাক্যের গঠনের উপর ভিত্তি করে দেয়া হয় । বলতো আজকের আর্টিকেলে আমরা বাক্যের বেশ কিছু খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নিব যা আপনার কেরিয়ারে কখনো না কখনো কাজে লাগবে ।
পোস্টের বিষয়বস্তু
বাক্য কাকে বলে
বাক্য হল শব্দের একটি বিন্যাস যা একটি সম্ভব মানের ঘটনা, বিষয় বা ঘটনার সমস্ত বিবরণ সম্পন্ন করে। এটি ভাষায় বাক্য গঠনের একটি উপযোগী একক। প্রতিটি বাক্য অক্ষর, শব্দ এবং বাক্যের প্রধান অংশ থাকে। বাক্য অর্থ বা বোধ প্রকাশ করে এবং বাক্যের সাথে কোনও প্রকারের ধ্বনি বা লক্ষণীয়তা সম্পর্কিত হতে পারে।
কতগুলো সুসংগঠিত এবং অর্থবোধক শব্দ ব্যাকরণের নিয়মে একত্রিত হয়ে নির্দিষ্ট ভাব প্রকাশকারী শব্দ সমষ্টিকে বলা হয়ে থাকে বাক্য । অর্থাৎ বাক্য মূলত একটি শব্দসমষ্টি যেটি নির্দিষ্ট অর্থ সংবলিত এবং এটি মানুষের মনের সম্পুর্ণ অথবা অংশ ভাব প্রকাশ করতে সক্ষম ।
বাক্যকে ভাষার মূল উপকরণ বলা হয়ে থাকে । বাক্যের গঠনের ওপর ভিত্তি করে বাক্যকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবিভাগ এর আওতায় আনা যেতে পারে । যেহেতু আমরা জেনেছি বাক্য কাকে বলে, এবার আমরা বাক্যের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে চলেছি।
বাক্যের ধরন
বাক্যের গঠন এবং বাক্যের ধরনের ওপর ভিত্তি করে বাক্যকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে ।
গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার?
গঠন অনুসারে বাক্য কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে ।
- সরল বাক্য
- জটিল বাক্য
- মিশ্র বাক্য ।
সরল বাক্য কাকে বলে
যে বাক্যে কেবলমাত্র একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে তাকে বলা হয় সরল বাক্য ।
চলুন উদাহরণ দেখে নেওয়া যাকঃ
- আমি প্রতিদিন আর্টিকেল লিখি।
- আমি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি না ।
- আমি তার সাথে কথা বলতে লজ্জাবোধ করি।
জটিল বাক্য কাকে বলে
যে বাক্যে একটি সমাপিকা ক্রিয়া এবং অপরটি অসমাপিকা ক্রিয়া হয়ে থাকে তাকে বলা হয় জটিল বাক্য।
উদাহরণ দেখে নেওয়া যাকঃ
- যদিও সে গরীব তবুও তার প্রচুর টাকা-পয়সা রয়েছে ।
- যদি তুমি আসো তবেই আমি যাব ।
- যদিও আমি তাকে ভালোবাসি তবুও সে আমাকে ঘৃণা করে ।
যৌগিক বাক্য কাকে বলে/মিশ্র বাক্যঃ
যে বাক্যে দুইটি সরল বাক্য থাকে তাকে বলা হয় মিশ্রবাক্য।
চলুন উদাহরণ দেখে নেওয়া যাকঃ
- রহিম আমার ছোট ভাই এবং করিম আমার বড় ভাই ।
- বাংলাদেশ একটি সুজলা সুফলা দেশ কিন্তু এই দেশের মানুষের মুখে হাসি নেই ।
- আমরা নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছি এবং আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি ।
অর্থ অনুসারে বাক্য প্রকারভেদ
এছাড়াও বর্ণনা অনুযায়ী বাক্যকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।
বিবৃতিমূলক বাক্য কাকে বলে
মূলত এই ধরনের বাক্যের মাধ্যমে একটি ব্যক্তির মনের ভাব প্রকাশ করা হয়ে থাকে। অথবা এর মাধ্যমে সাধারণ বিবৃতি প্রকাশ পায় । এটি হ্যা বোধক অথবা না বোধক হতে পারে । প্রতিটি বিবৃতিমূলক বাক্যের শেষে দাড়ি বিরাম চিহ্ন ব্যবহৃত হয় । বিবৃতিমূলক বাক্য শুধুমাত্র নিরপেক্ষভাবে একটি বিবৃতি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে । এর মাধ্যমে ব্যক্তি মনের আবেগ সম্পূর্ণ রূপে প্রকাশ পায় না । উদাহরণঃ আমি প্রতিদিন স্কুলে যাই।
প্রশ্নবাচক বাক্য
যে বাক্য দ্বারা প্রশ্ন করা হয়ে থাকে সেই সকল বাক্য কে প্রশ্নবোধক বা প্রশ্ন বাচক বাক্য বলা হয় । এই সকল বাক্যের মাধ্যমে মূলত একটি ব্যক্তি মন কোন কিছু জিজ্ঞাসা করে থাকে এবং তার মধ্যে আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয় । অর্থাৎ আমরা বলতে পারি যে বাক্যের মাধ্যমে ব্যক্তি মনের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়ে থাকে তাকে বলা হয় প্রশ্ন বাচক বাক্য । উদাহরনঃ আমি কি প্রতিদিন স্কুলে যাই না ?
আদেশসূচক বাক্য
–এ বাক্যের মাধ্যমে মূলত কোন আদেশ প্রকাশ পায় । তবে শুধু আদেশ নয় তার পাশাপাশি উপদেশ বা অনুরোধ প্রকাশ পেতে পারে । এই বাক্যে অনেক সময় কর্তা উহ্য থাকতে পারে । তবে যদি সরাসরি কর্তা থেকে থাকে,তাহলে সেটিকে আদেশসূচক বাক্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না করে বিবৃতিমূলক বাক্য বলা যেতে পারে । উদাহরণঃ স্কুলে যাও!
প্রার্থনাসূচক বাক্য
এই বাক্যের মাধ্যমে ব্যক্তি মোহন আকাঙ্ক্ষাসূচক প্রার্থনা প্রকাশ করে থাকে । উদাহরণঃ সৃষ্টিকর্তা তোমার মঙ্গল করুক !
অনুজ্ঞাবাচক বাক্য কাকে বলে
এই বাক্যের মাধ্যমে ব্যক্তি মনের আবেগের সম্পূর্ণ প্রতিফলন ঘটে । বাক্যের শেষে একটি আশ্চর্য বোধক বিরাম চিহ্ন ব্যবহৃত হয় । উদাহরণঃ হায় !আমি আর্টিকেলটি র্যাংক করাতে ব্যার্থ!
আরো পড়ুনঃ মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে? ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত মৌলিক সংখ্যা!
প্রকাশভঙ্গি অনুযায়ী বাক্যের শ্রেণীবিভাগঃ
বাক্যের প্রকাশভঙ্গির ভিত্তিতে বাক্যকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
ক) অস্তিবাচক বাক্য কাকে বলে/ হাঁ বাচক বাক্য :
যে বাক্যে সমর্থনের মাধ্যমে কোন কিছু বর্ণনা করা হয়, তাকে অস্তিবাচকবাক্য বা হাঁ বাচক বলে।
যে বাক্যে হাঁ বাচক শব্দ থাকে, তাকে হাঁ বাচক বা অস্তিবাচকবাক্য বলে।
যেমন- তুমি কালকে আসবে।আমি ঢাকা যাব।
[সদর্থক বা অস্তিবাচকবাক্য : এতে কোনো নির্দেশ, ঘটনার সংঘটন বা হওয়ার সংবাদ থাকে। যেমন :
বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা জিতেছে। দোকানপাট বন্ধ থাকবে
খ) নেতিবাচক বাক্য/ না বাচক বাক্য :
যে বাক্যে অসমর্থনের মাধ্যমে কোন কিছু বর্ণনা করা হয়, তাকে নেতিবাচকবাক্য বা না বাচক বলে।
যে বাক্যে না বাচক শব্দ থাকে, তাকে নেতিবাচকবাক্য বা না বাচকবাক্য বলে।
যেমন- তুমি কালকে আসবে না। আমি ঢাকা যাব না।
[নেতিবাচক বা নঞর্থকবাক্য : এ ধরনের বাক্যে কোন কিছু হয় না বা ঘটছে না- নিষেধ, আকাঙ্ক্ষা, অস্বীকৃতি ইত্যাদি সংবাদ কিংবা ভাব প্রকাশ করা যায়। যেমন :
আজ ট্রেন চলবে না।আপনি আমার সঙ্গে কথা বলবেন না।
বাক্য গঠনের উপাদান
বাক্য গঠণের জন্য যে সকল উপাদানের প্রয়োজন পড়ে তাদেরকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়।
- যোগ্যতা
- আসত্তি
- আকাঙ্খা
একটি স্বার্থক বাক্য গঠনের জন্য এই শর্তগুলোর প্রয়োজন পড়বে। যদি একটি বাক্য এই শর্তগুলো থেকে থাকে তবেই সেটিকে একটি স্বার্থক বাক্য বলা যেতে পারে।
উদ্দেশ্য ও বিধেয়
প্রতিটি বাক্যের দুটি অংশ থাকে- উদ্দেশ্য ও বিধেয়।
বাক্যে যার সম্পর্কে কিছু বলা হয়, তাকে উদ্দেশ্য বলে।
বাক্যে উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা কিছু বলা হয়, তাই বিধেয়।
যেমন- বইটি খুব ভালো।
বাক্যটিতে বইটি’ সম্পর্কে বলা হয়েছে। সুতরাং, এখানে ‘বইটি’ উদ্দেশ্য। অন্যদিকে, ‘বইটি’ সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘খুব ভালো’। এই ‘খুব ভালো’ বাক্যটির বিধেয় অংশ।
উদ্দেশ্য অংশ একটি শব্দ না হয়ে একটি বাক্যাংশও হতে পারে। এবং সেই শব্দ বা বাক্যাংশটি শুধু বিশেষ্য-ই হবে, এমন কোন কথাও নেই। উদ্দেশ্য বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন বাক্যাংশ, এমনকি ক্রিয়াভাবাপন্ন বাক্যাংশও হতে পারে।
উদ্দেশ্য বিধেয়
সৎ হওয়া খুব কঠিন। (এখানে ক্রিয়াভাবাপন্ন বাক্যাংশ উদ্দেশ্য)
সৎ লোকেরাই প্রকৃত সুখী। (এখানে বিশেষণভাবাপন্ন বাক্যাংশ উদ্দেশ্য)