শব্দ কাকে বলে? শব্দ কত প্রকার ও কি কি?

শব্দ কাকে বলে?

ভাষার প্রধান উপাদান হচ্ছে শব্দ। একাধিক ধ্বনির সম্মেলনে যদি কোন নির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশ পায় তবে তাকে শব্দ বলে। আবার বলা যায় বাগযন্ত্রের সাহায্যে বিশেষ কৌশলে উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনি সমষ্টি। অর্থাৎ এক বা একাধিক বর্ণ মিলে যখন একটি পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে তাকে শব্দ বলে।


অর্থাৎ অর্থবোধক বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিতে শব্দ গঠিত হয়। যেমন – ক,ল,ম এই তিনটি ধ্বনি একসাথে মিলে – কলম (ক+ল+ম) হয়। কলম দ্বারা লিখার একটি উপকরণকে বোঝায়।

আবার মনের ভাব প্রকাশের জন্য কয়েকটি শব্দ মিলে একটি বাক্য গঠিত হয়। যেমন – মেয়েটি প্রতিদিন কলেজে আসে। এ বাক্যে মেয়েটি, প্রতিদিন, কলেজে, আসে – এগুলোর প্রত্যেকটিই এক একটি শব্দ। আবার বাক্য ছাড়া বিশেষ ভাব, বস্তু ও প্রাণী প্রভৃতি প্রকাশ করে এমন অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিও শব্দ। যেমন – আমি, তুমি, ঘোড়া, গাড়ি, সে ইত্যাদি।

শব্দ কত প্রকার ও কি কি?

১. মৌলিক শব্দ কাকে বলে?

যে শব্দকে বিশ্লেষণ করা যায় না, বা বিশ্লেষণ করলে ভাঙা অংশের কোনো অর্থ হয় না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমন – মা, হাত, ঘোড়া— মৌলিক শব্দকে ‘স্বয়ংসিদ্ধ’ শব্দও বলে। কারণ, মৌলিক শব্দের অর্থ স্বতঃপ্রকাশিত ও চূড়ান্ত।

২. সাধিত শব্দ কাকে বলে?

যে সকল শব্দকে বিশ্লেষণ করলে মৌলিক একটি অংশ পাওয়া যায়, তাকে সাধিত শব্দ বলা হয়।

অথবা আমরা বলতে পারি, যেসব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে আলাদা অর্থবোধক শব্দ পাওয়া যায়, সেগুলোকে সাধিত শব্দ বলে। সাধিত মানে সাধন বা তৈরি করা হয়েছে। যেমন – অজানা = (মুগ্ধ | ধাতু জান) অ জান্ + আ তেমনি ছেলেমি, রাখালি, হাতল প্রভৃতি। একাধিক মৌলিক শব্দের যোগেও সাধিত শব্দ তৈরি হয়, যেমন – হাতপাখা = হাত+পাখা। তেমনি – জলপথ, দিনরাত, আশা আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি।

আরো পড়ুন ;- রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে?

অর্থ অনুসারে শব্দের প্রকারভেদ হলো ৩ টি

১. যৌগিক শব্দ কাকে বলে?

প্রকৃতি প্রত্যয় দ্বারা যে সব শব্দের অর্থ নির্ণয় করা যায় তাদের যৌগিক শব্দ বলে।
যেমন-জলজ(জলে জন্মে যা),দাতা(দান করে যে),ঘুমন্ত(ঘুম+অন্ত) ইত্যাদি।

২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ কাকে বলে?

যে সমস্ত শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থের সঙ্গে প্রচলিত অর্থের মিল নেই, সেই সমস্ত শব্দকে রুঢ়ি শব্দ বলে।

আরো স্পষ্টভাবে বললে, যে শব্দে প্রকৃতি প্রত্যয়ের কোনও অর্থই প্রকাশিত না হয়ে লোকপ্রচলিত অন্য অর্থ প্রকাশিত হয়, তাকে ‘রূঢ়’ শব্দ বলে। হরিণ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ‘হরণকারী’ কিন্তু আদৌ সে অর্থে ব্যবহার না হয়ে ‘হরিণ’ পশুবিশেষকে বোঝাচ্ছে। রূঢ় শব্দের অন্যান্য উদাহরণ: মাংস, লাবণ্য, শ্বশুর, মণ্ডপ, বিবাহ, পলাশ, সন্দেশ (মিষ্টান্ন অর্থে) ইত্যাদি।

কিছু রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দের উদাহরণ

ক্ষোভজনক, কঠিন, উগ্র, তীব্র, নিষ্ঠুর, কঠোর, সঙ্কটজনক, উগ্রতাপস্যা, উগ্রদণ্ড, উগ্রসাধ্য, রূঝান, রূঢ়, রূঢ়ি, রূঢ়িত, রূঢ়িতকরণ, রূঢ়তা, রূঢ়ত্ব, রূঢ়পথ, রূঢ়পথে, রূঢ়পন্থী, রূঢ়প্রথা, রূঢ়প্রথাগতি, রূঢ

৩. যোগরূঢ় শব্দ কাকে বলে?

সমাস দ্বারা গঠিত যেসব শব্দের বুৎপত্তিগত ও ব্যবহারিক অর্থ সম্পূর্ণ আলাদা সেসব শব্দকে যোগরূঢ় শব্দ বলে।
যেমন-পঙ্কজ(প্রকৃত অর্থ পঙ্কে জন্মে যা কিন্তু ব্যাবহারিক অর্থ পদ্ম)
জলদ(প্রকৃত অর্থ যা জল দেয় কিন্তু ব্যাবহারিক অর্থ মেঘ)।

আরো পড়ুন ;- Letter কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

শব্দকে উৎপত্তির দিক থেকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়

১. তৎসম শব্দ কাকে বলে?

সংস্কৃত ভাষার যে-সব শব্দ পরিবর্তিত না হয়ে সরাসরি বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকেই বলা হয় তৎসম শব্দ।
উদাহরণ- চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য,

২. অর্ধতৎসম শব্দ কাকে বলে?

যে -সব সংস্কৃত শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় অর্ধ-তৎসম।

যেমন, জ্যোৎস্না˂ জ্যোছনা, শ্রাদ্ধ˂ ছেরাদ্দ, গৃহিণী˂ গিন্নী, বৈষ্ণব˂ বোষ্টম, কুৎসিত˂ কুচ্ছিত।

৩. তদ্ভব শব্দ কাকে বলে?

বাংলা ভাষা গঠনের সময় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ থেকে যে সব শব্দ পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছিলো, সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ। অবশ্য, তদ্ভব শব্দের মূল অবশ্যই সংস্কৃত ভাষায় থাকতে হবে।

যেমন- সংস্কৃত ‘হস্ত’ শব্দটি প্রাকৃততে ‘হত্থ’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর বাংলায় এসে সেটা আরো সহজ হতে গিয়ে হয়ে গেছে ‘হাত’। তেমনি, চর্মকার˂ চম্মআর˂ চামার,

৪. দেশি শব্দ কাকে বলে?

বাংলা ভাষাভাষীদের ভূখণ্ডে অনেক আদিকাল থেকে যারা বাস করতো, সেইসব আদিবাসীদের ভাষার যে সব শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকে বলা হয় দেশি শব্দ।

এই শব্দ আদিবাসীদের মধ্যে প্রচলন আছে- কোল, মুণ্ডা, ভীম, ইত্যাদি। যেমন, কুড়ি (বিশ)- কোলভাষা, পেট (উদর)- তামিল ভাষা, চুলা (উনুন)- মুণ্ডারী ভাষা।

৫. বিদেশি শব্দ কাকে বলে?

বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা অন্য ভাষাভাষীর মানুষের সংস্পর্শে এসে তাদের ভাষা থেকে যে সব শব্দ গ্রহণ করেছে, বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে অন্য ভাষার শব্দ গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। যে কোনো ভাষার সমৃদ্ধির জন্য বিদেশি শব্দের আত্মীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এদিক দিয়ে বাংলা ভাষা বেশ উদারও বটে।

শেষ কথা

শব্দ হল ভাষার সবচেয়ে ছোট ইউনিট বা একক যা ধ্বনিত হতে পারে এবং একটি অর্থ নির্দেশ করতে পারে। এটি বাক্যের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট এবং ভাষার ব্যবহার এর মৌলিক উপাদান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *