গ্রাফিক্স ডিজাইন কি? গ্রাফিক্স ডিজাইন থেকে আয়

ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অধিকাংশ মানুষই ইতিমধ্যে জেনে গেছে যে , বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম ও সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ব্যবহার করে ঘরে বসে আয় করা যায় লক্ষ লক্ষ টাকা। মূল আলোচনায় প্রবেশ করার আগে,গ্রাফিক্স ডিজাইন কি তা জেনে নিই।


গ্রাফিক্স ডিজাইনিং হলো কোন টাইপোগ্রাফিক্স,ফটোগ্রাফিক্স বা আইকনগ্রাফিক্স বা চিত্রের সাহায্যে কোন ভার্চুয়াল যোগাযোগ বা কোন সমস্যা সমাধানের মাধ্যম। সহজ ভাষা বললে,ব্যক্তির চিন্তা,দক্ষতা ও কনসেপচুয়াল নলেজ ব্যবহার করে কোন ছবি অথবা টেক্সটের মাধ্যমে এমন একটা ছবি তৈরি করা যার মাধ্যমে চিন্তার প্রতিচ্ছবি সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়।

গ্রাফিক্স ডিজাইন কি?

বলতে গেলে কোনো বিজ্ঞাপন, ব্যানার, টি শার্ট ডিজাইন, ফার্নিচার ডিজাইন, ফ্যাশন ডিজাইন, এবং প্রোডাক্ট ডিজাইন এসব কাজগুলো কম্পিউটারের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে ক্রিয়েটিভ আইডিয়া দিয়ে নিত্যনতুন ডিজাইন করার নামই হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইন।

গ্রাফিক্স ডিজাইন হলো চিত্র, লেখা ও রঙ ব্যবহার করে তথ্য বা বার্তা দৃষ্টিনন্দনভাবে উপস্থাপন করার একটি শিল্প ও পেশা।

গ্রাফিক্স ডিজাইন থেকে আয়

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর ক্ষেত্র বেশ বড়।তাই আয়ের বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে।তাই ক্যাটাগরী ভেদে আয়ের পরিমাণেও ভিন্নতা রয়েছে। আসুন জেনে নিই,গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর করে আয়ের উপায় গুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত।

ফুলটাইম জব

আমাদের লোকাল মার্কেটে গ্রাফিক্স ডিজাইনারের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । বিডি জবসের মত সাইট গুলো থেকে আপনি খুব সহজেই গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর জন্য জবসেৱ সার্চ দিতে পারবেন । পে স্কেল এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একজন এভারেজ গ্রাফিক্স ডিজাইনারের সেলারি বার্ষিক এক লাখ 30 হাজার টাকা । তবে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অনেকে অনেক উচ্চমূল্যে গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কাজ করে থাকেন । স্যালারির দিক থেকে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটেৱ ওই লোকাল মার্কেট এর মধ্যে বিশাল তারতম্য আছে । যেহেতু গ্রাফিক্স ডিজাইনিং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে করা যায় সেহেতু আপনি ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে কাজ করার সুযোগ পাবেন । সেক্ষেত্রে আপনার সেলারি ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট অনুযায়ী হবে ।

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফ্রিল্যান্সার শব্দটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে । আমাদের মধ্যে মোটামুটি সবারই ধারনা রয়েছে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে । ফ্রিল্যান্সিংয়ের এত এত জনপ্রিয়তার পেছনে রয়েছে কিছু সুবিধাজনক কারণ । সংক্ষেপে কিছু কারণ তুলে ধরছি :

  • you are your own Boss
  • no time limitation
  • no age restriction
  • no certificate requirement
  • part time or full time

ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রয়ের মাধ্যমে

এরপর পরিচয়ে আয়ের মাধ্যম তিনি কথা বলা যায় তা হল ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রয় । অনেক ধরনের ডিজিটাল প্রোডাক্ট আপনি বানিয়ে বিক্রি করতে পারবেন বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে । এ ধরনের প্রোডাক্টের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যেমন : বিভিন্ন ইলাস্ট্রেশন , ফন্ট , ব্রাশ প্রভৃতি ।

এ ধরনের প্রোডাক্ট বাজারজাত করতে পারবেন এরকম কিছু অনলাইন মার্কেটপ্লেস হল:creative market, Evanto elements, Adobe stock ইত্যাদি ।

এসব মার্কেটপ্লেসেৱ পাশাপাশি আপনার নিজস্ব যদি কোন সাইট থেকে থাকে , তবে এ ধরনের পণ্য আপনি শেষ ওয়েবসাইট থেকে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন ।

মেন্টরিং

আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনিং ফিল্ডে বেশ অভিজ্ঞ লোক হন অর্থাৎ সিনিয়র গ্রাফিক্স ডিজাইনার হন তবে আপনি চাইলে নতুনদের গ্রাফিক্স ডিজাইনিং শিখিয়েও অর্থ উপার্জন করতে পারেন । আপনি চাইলে একটি বুথক্যাম্প খুলে তাদেরকে হেল্প করতে পারেন অথবা কোর্স আকারে আপনার শিখন বিক্রি করতে পারেন । এছাড়া আরেকটি উল্লেখযোগ্য উপায় খোলা মেন্টরিং জেটিঘাটে বিশ্বব্যাপী অধিক জনপ্রিয় হলেও আমাদের দেশে তেমন একটি প্রচলন নেই । এটা অনেকটা টিচার যেমন টিউশনির বিনিময় একটি নির্দিষ্ট সময়ে কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীকে পড়ায় , ঠিক তেমনি অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ে নতুনদের গাইড করা গ্রাফিক্স ডিজাইনিং বিষয়ে এটি হলো মেন্টরিং ।

এজেন্সির মাধ্যমে

গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে বিভিন্ন জব্বার ফ্রিল্যান্সিং করার মাধ্যমে পাঁচ-ছয় বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আপনি পারেন একটি এজেন্সি সেটআপ করতে । এক্ষেত্রে তখন আর আপনাকে একা কাজ করলে চলবে না , একটি দক্ষ টিম গঠনের মাধ্যমে আপনাকে আপনার এজেন্সী এটি চালাতে হবে । তবে কোনো অবস্থাতেই বিগিনার অবস্থায়ই এজেন্সির উদ্যোক্তা হয়ে যাওয়ার চিন্তা করা যাবে না । প্রথমে বিভিন্ন জব ফ্রিল্যান্সিং করে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে পরবর্তীতে এজেন্সি সেটআপের চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে । সাধারণত অনেক বড় বড় যে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং প্রজেক্ট গুলো আছে সেগুলো ইন্ডিভিজুয়াল ফ্রিল্যান্সারদের হাতে না দিয়ে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে এর কাজ সম্পন্ন করা হয় । তাই আপনি যদি সফলভাবে একটি এজেন্সি চালাতে সক্ষম হয়ে থাকেন তবে এটি আশা করা যায় যে তাদের উপার্জিত রেভিনিউ এর পরিমাণ অনেক বেশি হবে ।

ইউটিউবিং

আপনি চাইলে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন করে সেগুলো ভিডিও করে স্ক্রিন রেকর্ড করে ইউটিউবে আপলোড করে মনিটাইজেশন করে অনেক পরিমাণে ইনকাম করতে পারবেন। এটা একটি আনলিমিটেড ইনকাম এর জনপ্রিয় মাধ্যম।

আরো পড়ুন ;- ব্লগ থেকে আয় করার উপায়

এডিট গ্রাফিক্স

বিভিন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইন টেম্পলেটগুলো আপনি এডিটিং করেও ভালো পরিমানে আয় করতে পারবেন অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে থেকে। বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোতে এই ধরনের অনেক অফার হয়ে থাকে। কেননা বিভিন্ন কোম্পানি অন্যান্য মার্কেটপ্লেস থেকে টেম্পলেটগুলো কিনা এবং সেগুলো বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স দ্বারা ডিজাইন ডিজাইন গুলো কে এডিট করে নেয় এবং আপনি চাইলে এডিট করে ভালো পরিমানে আয় করতে পারবেন অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলো থেকে।

বিজ্ঞাপন ডিজাইন

বিভিন্ন কোম্পানির প্রডাক্ট বা সার্ভিস গুলোকে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন ব্যানার ডিজাইন করে থাকেন। এবং সেগুলো অনলাইনে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসগুলোতে কে ফ্রিল্যান্স করেই করে থাকেন। আপনি একজন বিজ্ঞাপন ব্যানার ডিজাইনার হয়ে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস থেকে খুব ভালো পরিমাণে ইনকাম করতে পারবেন।

ইনফোগ্রাফিক ডিজাইন

ইনফো গ্রাফিক্স ডিজাইন অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে ইনকাম করার একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা ইনফোগ্রাফিক ডিজাইন করে প্রতি মাসে 50 হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই লক্ষ টাকা এবং তারও অধিক ইনকাম করছে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে থেকে।

উপসংহার

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর মতো সৃজনশীল কাজের চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।মানুষ নতুনত্ব ও শিল্পের ছোঁয়া পেতে ঝুঁকে পড়ছে রুচিশীল পণ্যের দিকে।এটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় দিক।পোষাক থেকে শুরু করে ব্যবহার্য পণ্যতেও নতুনত্ব আনতে গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের করা ডিজাইন ব্যবহৃত হচ্ছে।তাই দক্ষতা ও সৃজনশীল মননের সমন্বয় করতে পারলে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং ক্যারিয়ার হিসেবে অত্যন্ত সমৃদ্ধ অপশন বলে বিবেচনা করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *