প্রত্যয় কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?

ভাষার সঠিক প্রয়োগ ও মাধুর্য মন্ডিত করতে ব্যকরণ জানা প্রয়োজন।বাংলা ব্যকরণে অন্যতম আলোচ্য বিষয় হলো প্রত্যয়।একটু ঝামেলার বলে অনেকেই বিস্তারিত পড়তে বা বুঝতে কম চায়।কিন্তু ধৈর্য্যের সাথে সময় নিয়ে চেষ্টা করলে বাংলা ব্যকরণের যেকোন বিষয় আয়ত্ব করা সম্ভব।প্রত্যয় বাংলা ব্যকরণের অন্যতম আলোচ্য বিষয়। আপনাদের সুবিধার্থে আজ আলোচনা করবো প্রত্যয় কাকে বলে,এর প্রকারভেদ ও বিস্তারিত নিয়ে।তাহলে কথা না বাড়িয়ে প্রবেশ করা যাক মূল আলোচনায়।

প্রত্যয় কাকে বলে

প্রত্যয় হল এমন একটি শব্দাংশ যা মূল শব্দের পরে (বা আগে) বসে নতুন শব্দ গঠন করে এবং সেই শব্দের অর্থ বা বাক্যগত অবস্থান পরিবর্তন করে।

প্রত্যয় হলো এমন একটি উপসর্গ বা শব্দাংশ যা মূল শব্দের পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি করে এবং শব্দের অর্থ বা পদবাচ্য পরিবর্তন করে।

প্রত্যয় কত প্রকার?

প্রত্যয় দুই প্রকার: ১.তদ্ধিত প্রত্যয়, ২.কৃৎ প্রত্যয়।

তদ্ধিত প্রত্যয় কাকে বলে

শব্দের পরে যেসব প্রত্যয় যুক্ত হয়, সেগুলোকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। তদ্ধিত প্রত্যয় দিয়ে সাধিত শব্দকে বলে তদ্ধিতান্ত শব্দ।

তদ্ধিত প্রত্যয় এর উদাহরণ: পঠ+অক=পাঠক, দিন+ইক = দৈনিক। এখানে, ‘অক’ ও ইক’ তদ্ধিত প্রত্যয় এবং ‘পাঠক’ ও ‘দৈনিক’ হলো তদ্ধিতান্ত শব্দ।

কৃৎ প্রত্যয় কাকে বলে

ক্রিয়ামূল বা ধাতুর পরে যেসব প্রত্যয় যুক্ত হয়, সেগুলোকে কৃৎ প্রত্যয় বলে। কৃৎ প্রত্যয় দিয়ে সাধিত শব্দকে বলে কৃদান্ত শব্দ।

কৃৎ প্রত্যয় এর উদাহরণ: দুল্‌+অনা = দোলনা, কৃ+তব্য = কর্তব্য। এখানে, ‘অনা’ ও ‘তব্য’ হলো কৃৎ প্রত্যয় এবং ‘দোলনা’ ও ‘কর্তব্য’ হলো কৃদন্ত শব্দ।

আরো জানুন ;- জ্যামিতি কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি?

প্রত্যয় এর কাজ কি

১. নতুন নতুন শব্দ গঠন করে শব্দ ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে তোলে।

যেমন দা একটি ধাতু। যদি এই ধাতুর পর ভিন্ন ভিন্ন প্রত্যয় –

ব্যবহার করি তাহলে আমরা ভিন্ন ভিন্ন শব্দ পাবো।

√দা+ ণক দায়ক

√দা+ তব্য = দাতব্য

√দা+ অনীয় দানীয়

আবার শব্দের পরে প্রত্যয় যুক্ত করে নতুন শব্দ গঠন করা যায়। যেমন- ভাস্কর একটি শব্দ। যদি শব্দটির পরে প্রত্যয় যোগ করি তাহলে আমরা আবার একটি নতুন শব্দ পাবো – – ভাস্কর + ষ্ণ্য = ভাস্কর্য (নতুন শব্দ)

২. প্রত্যয়ের সাহায্যে ধাতু বা শব্দ থেকে নতুন ধাতু তৈরি করা

যায়।

যেমন- ক. কর্ (ধাতু) + আ (ধাত্ববয়ব প্রত্যয়) = করা (নব

গঠিত ধাতু)

খ. ঘাম (নামশব্দ) + আ (ধাত্ববয়ব প্রত্যয়) = ঘামা (নামধাতু)

৩. বাক্য সংকোচনে প্রত্যয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

যেমন- যা পাঠ করা হয়েছে — এই বাক্যটিকে সংকোচন করলে হবে পঠিত। শব্দটির বিশ্লেষণ পই পই “অর্থ “পাঠ করা এবং ক্ত প্রত্যয় “হইয়াছে অর্থে

ব্যবহৃত হয়ে বিশেষণ পদ গঠন করে বাক্যটিকে সংকুচিত করেছে।

৪. পদ পরিবর্তন করতে প্রত্যয় বিকল্পহীন।

যেমন একটি বিশেষণ পদ হল জীর্ণ। এই পদকেই বিশেষ্য পদে পরিবর্তন করা সম্ভব প্রত্যয় যোগে জীর্ণ + তা = জীর্ণতা (বিশেষ্য)

৫. প্রচলিত শব্দের ব্যাকরণগত শুদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত করতে প্রত্যয়ের সাহায্য প্রয়োজন।

যেমন-

ক. প্রফুল্লিত, আকুলিত ইত্যাদি শব্দ ব্যাকরণগত ভাবে শুদ্ধ নয়। কেননা প্রফুল্ল, আকুল ইত্যাদি শব্দ হল বিশেষণ। আর বিশেষণের উত্তর ইত প্রত্যয় যুক্ত হয় না। অর্থাৎ শব্দের ব্যাকরণগত শুদ্ধতা বিচার করতে হলে আমাদের প্রত্যয়ের আশ্রয় নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *