দাবা খেলার নিয়ম ও কৌশল বা ফাঁদ: দাবা খেলার জন্ম কোন দেশে হয়েছিল

স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে কিংবা অন্য কোন অবসর সময়ে অনেকে দাবা খেলে থাকে। দাবা খেলার নিয়ম কানুন এবং কৌশল অনেকেই জানে না । যার ফলে ভালো ভাবে দাবা খেলতে পারে না। আজকে চলুন আমরা দাবা খেলার নিয়ম ও কৌশল বা ফাঁদ বিস্তারিত খুঁটিনাটি জেনে নেই।

দাবা খেলার নিয়ম

দাবা দুটি খেলোয়াড়ের মধ্যে একটি খেলা। এটি একটি বোর্ড গেম। যেটি দুটি রাজ্যের মধ্যে গুটি দিয়ে যুদ্ধ করে খেলতে হয়। এটি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। লক্ষ লক্ষ মানুষ এটি বিনোদনমূলক এবং প্রতিযোগিতামূলক উভয়টিই খেলে থাকেন। দাবা খেলায় কোন গোপন তথ্য নেই। এটি একটি টার্ন-ভিত্তিক কৌশল গেম। এই কারণে, ভাগ্যের সহায়তা দাবায় নেই বললেই চলে।

 

দাবার বোর্ড

  • বোর্ডে মোট ৬৪ ঘর (৮x৮) থাকে।

  • রঙ একবার সাদা, একবার কালো – এমনভাবে সাজানো।

  • প্রতিটি খেলোয়াড়ের দিকে ডানপাশের নিচের ঘরটি সাদা (হালকা রঙের) থাকতে হবে।

ঘুঁটির ধরণ ও চলাফেরা

প্রতিটি খেলোয়াড়ের থাকে ১৬টি ঘুঁটি:

  • ১ রাজা (King)

  • ১ রানী (Queen)

  • ২ নৌকা/হাতি (Rook)

  • ২ ঘোড়া (Knight)

  • ২ উট/বিশপ (Bishop)

  • ৮ সৈনিক/পাদা (Pawn)

 প্রতিটি ঘুঁটির চাল আলাদা:

  1. রাজা (King) এক ঘর করে চারদিকেই (আড়াআড়ি, সোজা, তির্যক) যেতে পারে।

  2. রানী (Queen) যেকোনো দিকে (সোজা, আড়াআড়ি, তির্যক) অসীম ঘর চলতে পারে।

  3. নৌকা/হাতি (Rook) সোজা বা আড়াআড়ি অসীম ঘর চলতে পারে।

  4. উট/বিশপ (Bishop) শুধু তির্যকভাবে অসীম ঘর চলতে পারে।

  5. ঘোড়া (Knight) “L” আকারে চলে (দুই ঘর সোজা + এক ঘর আড়াআড়ি, বা উল্টো)। একমাত্র ঘুঁটি যে অন্য ঘুঁটির উপর দিয়ে লাফিয়ে যেতে পারে।

  6. সৈনিক/পাদা (Pawn) সামনে এক ঘর চলে। প্রথম চালে চাইলে দুই ঘরও যেতে পারে। মারতে পারে শুধু তির্যকভাবে এক ঘর। বিপরীত পাশে পৌঁছে গেলে রানীসহ অন্য যেকোনো ঘুঁটিতে রূপান্তরিত হতে পারে (প্রমোশন)।

বিশেষ নিয়ম

  1. ক্যাসলিং (Castling) রাজা ও নৌকার মধ্যে একসাথে একটি বিশেষ চাল। শর্ত: রাজা বা নৌকা আগে নড়েনি, মাঝে কোনো ঘুঁটি নেই, রাজা চেকের মধ্যে নেই।

  2. এন পাসঁ (En Passant) যদি প্রতিপক্ষের পাদা একসাথে দুই ঘর এগোয় এবং আপনার পাদার পাশে আসে, তাহলে সাথে সাথে পাশ কাটিয়ে মারতে পারবেন।

  3. চেক (Check) যদি কোনো ঘুঁটির আক্রমণে রাজা পড়ে, সেটি চেক। তখন রাজাকে অবশ্যই বাঁচাতে হবে।

  4. চেকমেট (Checkmate) যদি রাজাকে বাঁচানোর আর কোনো পথ না থাকে, খেলা শেষ।

  5. স্টেলমেট (Stalemate) যদি কোনো চাল বাকি না থাকে কিন্তু রাজা চেকে না থাকে, খেলা ড্র হয়।

খেলার ফলাফল

  • জয় (চেকমেট করে)।

  • পরাজয় (নিজের রাজা চেকমেটে পড়লে)।

  • ড্র (স্টেলমেট, একই চাল বারবার হওয়া, ঘুঁটির অভাবে জেতা না সম্ভব হওয়া ইত্যাদি কারণে)।

 

দাবা খেলার জন্ম কোন দেশে হয়েছিল?

  • ইতিহাসবিদদের মতে দাবার উৎপত্তি হয়েছিল ভারতবর্ষে, প্রায় ষষ্ঠ শতকে

  • তখন এর নাম ছিল “চতুরঙ্গ” (চতুরঙ্গ মানে চার বাহিনী—অশ্বারোহী, পদাতিক, হাতি ও রথ)।

  • পরে এটি পারস্যে ছড়িয়ে পড়ে, সেখানে এর নাম হয় “শতরঞ্জ”

  • সেখান থেকে আরব বিশ্বের মাধ্যমে ইউরোপে প্রবেশ করে এবং ধীরে ধীরে আধুনিক দাবার রূপ পায়।

দাবা খেলার কৌশল ও ফাঁদ 

  • ফুল’স মেট (Fool’s Mate): মাত্র দুই চালেই খেলা শেষ করার সবচেয়ে দ্রুততম ফাঁদ। সাধারণত নতুন খেলোয়াড়রা ভুল করে এতে ফেঁসে যায়।

  • স্কলার’স মেট (Scholar’s Mate): চার চালে প্রতিপক্ষের রাজাকে চেকমেট করার প্রচেষ্টা। মূলত নতুন খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রচলিত।

  • ফর্ক (Fork): ঘোড়া বা অন্য কোনো ঘুঁটি একসাথে দুই বা ততোধিক ঘুঁটি আক্রমণ করে।

  • পিন (Pin): কোনো ঘুঁটি নড়তে পারছে না, কারণ সরলেই পিছনে থাকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ঘুঁটি (যেমন রাজা বা কুইন) বিপদে পড়বে।

  • স্কিউয়ার (Skewer): বড় ঘুঁটিকে আক্রমণ করা হয়, সে সরলেই পিছনের ছোট ঘুঁটি ধরা যায়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *