আমাদের ছোট নদী কবিতা ও মূলভাব

আমাদের ছোট নদী কবিতাটি বাংলাদেশের প্রখ্যাত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বহুল পরিচিত ও হৃদয়স্পর্শী কবিতা। এটি মূলত কবির শৈশব স্মৃতিভিত্তিক রচনা, যেখানে তিনি গ্রামের প্রকৃতি, নদী, ও তার চারপাশের জীবনের সহজ-সরল সৌন্দর্যকে জীবন্ত করে তুলেছেন।

কবিতায় ছোট নদীটি কেবল একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য নয়, বরং গ্রামীণ জীবনের প্রাণ ও কবির শৈশব অনুভূতির প্রতীক হিসেবে ফুটে উঠেছে। এর মাধ্যমে কবি প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের গভীর সম্পর্ক ও সেই সরল জীবনের আনন্দকে অনন্যভাবে প্রকাশ করেছেন।

আমাদের ছোট নদী

আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।
পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি,
দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।

চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা,
একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা।
কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক,
রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক।

আর-পারে আমবন তালবন চলে,
গাঁয়ের বামুন পাড়া তারি ছায়াতলে।
তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাইবার কালে
গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে।

সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে
আঁচল ছাঁকিয়া তারা ছোটো মাছ ধরে।
বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে,
বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে।

আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর
মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর।
মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে,
ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে।
দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া,
বরষার উৎসব জেগে ওঠে পাড়া।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *